Agaminews
Dr. Neem Hakim

কুমিল্লায় গোমতীর চর যেন এক শসার রাজ্য


Ekattor News প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ৩:১৭ অপরাহ্ন /
কুমিল্লায় গোমতীর চর যেন এক শসার রাজ্য

একাত্তর নিউজ ডেস্ক:

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গোমতী নদীর চর যেন এক বিস্ময়কর সবুজ রাজ্য। শীতের শুরুতেই এই চরের উর্বর জমিতে শুর হয় শসা চাষের মৌসুম। নদীর পলিমাটি আর স্বাভাবিক উর্বরতা চরের জমিকে আশীর্বাদ করেছে অদ্বিতীয় কৃষি সম্ভাবনায়। তাই প্রতি বছর শসা মৌসুম এলেই এখানে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে কৃষক-কৃষাণীদের মাঝে। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারেও পাঠানো হয় এই চরের শসা। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতায় এই চরে গড়ে উঠেছে এক অনন্য শসা রাজ্য, যা অঞ্চলজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। শসা মৌসুমে চরের গ্রামগুলোতে তৈরি হয় এক ধরণের উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে যখন কৃষকেরা মাঠে নামেন, তখন নদীর পাড় জুড়ে সবুজ ক্ষেত যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। সূর্যের আলো পড়তেই চকচকে সবুজ পাতার ওপর টুপটাপ শিশিরবিন্দু চরের প্রকৃতি যেন নতুন দিনের বার্তা জানায়। শুধু কৃষি নয়, এই চরের শসা আশপাশের মানুষের জীবন-জীবিকায়ও সরাসরি অবদান রাখে। পরিবহনকর্মী, হাটবাজারের শ্রমিক, পাইকার—সবাই এ মৌসুমে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরে আসে। গোমতী তীরবর্তী এই শসা রাজ্য শুধু দেবিদ্বারের কৃষির সম্ভাবনাই নয়, দেশের সবুজ কৃষি ঐতিহ্যেরও অংশ হয়ে উঠেছে। নদীর চরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ কৃষিভিত্তিক স্বপ্ন আগামী দিনগুলোতেও হাজারো কৃষকের জীবনে আলোর পথ দেখাবে—এমনটাই আশা স্থানীয়দের। দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিকটবর্তী বারেরার চর, খলিলপুর, হামলাবাড়ি, বালিবাড়ি ও আশানপুর এলাকা গোমতী তীরবর্তী সবচেয়ে বিখ্যাত শসা উৎপাদন কেন্দ্র। প্রায় দুইযুগ ধরে এখানে শসা চাষ হচ্ছে। একসময়ের মিস্টি আলু ও পাটচাষের জমি এখন পরিণত হয়েছে সবুজ শসার খেতের বিশাল বিস্তারে। পুরোনো দিনের সেই গল্প আজ পরিণত হয়েছে নতুন প্রজন্মের জীবিকা ও ঐতিহ্যে। চরের মাঠে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি সবুজ ক্ষেত। কোথাও কৃষকেরা শসা তুলছেন, কোথাও পাতা পঁচা রোধে স্প্রে দিচ্ছেন আবার কেউ পরিচর্যা করছেন লতাগুল্ম। নদীসংলগ্ন ঢালু জায়গায় এবং মাচার নিচে-উপরে জমে থাকে তাজা শসার স্তূপ। ওজন করার পর সেগুলো তুলে দেওয়া হয় পিকআপ ভ্যানে। কৃষাণীরাও সমান দক্ষতায় এই কাজে সহযোগিতা করেন। প্রতিটি পরিবার যেন শসা মৌসুমে এক একটি ছোট কৃষি খামারে পরিণত হয়। এ চরের শসার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বড় আকৃতি, টাটকা স্বাদ এবং উচ্চমান। সাধারণ শসার পাশাপাশি এখানে পাওয়া যায় ৪/৫ কেজি ওজনের বড় বীজ শসাও, যা কৃষকদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস। চলতি মৌসুমে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের মতে, গোমতী নদীর পলিমাটি শসার বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বালিবাড়ি গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদেও নদীর চরের শসা খুবই সুস্বাদু। এজন্য এখানকার শসার চাহিদা সারা দেশেই বেশি। শীত এলে আমাদের চর এলাকায় প্রায় প্রতি জমিতে শসা চাষ হয়।

বারেরাচর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, একসময় তাদের বাপ-দাদারা এই চরে পাট, আলু চাষ করতেন, তবে তেমন লাভবান হতেন না। কিন্তু সময়ের বদলে এখন সবজি চাষই তাদের মূল ভরসা। তিনি বলেন, পাটের জায়গা দখল করে এখন শসা আমাদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম। শীতের শুরুতে শসা চাষ করে আমরা ভালো আয় করতে পারি।

স্থানীয় পলী চিকিৎসক হালিম সরকার জানান, গোমতী চরের শসা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। নিমসার, ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এ টি এম রাশেদুজ্জামান সরকার বলেন, গোমতী নদীর চরের শসা বছরে একবার শীতের শুরূ থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চাষ হয়। নদীর পলিমাটি ও জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শসার গুণগত মান নিশ্চিত করে। তাই এখানকার শসা বাজারে সবসময়ই আলাদা কদর পায়। তিনি আরও জানান, জমির উর্বরতা ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ নিয়মিত কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। এতে উৎপাদন আরও বাড়ছে এবং চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।