
একাত্তর নিউজ ডেক্স:
বিষখালী নদীর ভাঙনের কবলে এখন বিলীন হওয়ার পথে বেতাগী উপজেলারকালিকাবাড়ির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গ্রাম। এ কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামক ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ঝুঁকি নিয়েই চলছে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম। পাশেই রয়েছে কালিকাবাড়ি বাজার। বিদ্যালয় ভবনটি যে কোনো দুর্যোগের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্র সাইক্লোন শেল্টার এবং নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হয়। নদী ভাঙন রোধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় যে কোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সাথে সংকট দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি নামক এলাকার ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৯ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্কুলকাম সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে বিষখালী নদীর অনবরত ভাঙনে গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কালিকাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ঘুরে আরো দেখা যায়, বিষখালী নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়ের সামনের পাকা সড়কটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। ফলে সড়কের ভাঙা অংশ পার হয়েই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে শিশুদের। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই সাঁতার না যানায় স্কুলে আসতে গিয়ে নদীতে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও অতি জোয়ারের পানিতে স্কুলের মেঝে পর্যন্ত নদীর পানি চলে আসায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আর এ কারণেই ঝুঁকি এড়াতে বাধ্য হয়ে শিশুদের দূরের স্কুলে ভর্তি করছেন অধিকাংশ অভিভাবকরা। অপরদিকে অনবরত বিষখালী নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হুমায়ূন কবির বলেন, স্কুলটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন নদীর ভাঙন অনেক দূরে ছিল। ১০-১২ বছর ধরে চলমান ভাঙন এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ২০০৬ সালে স্কুলে যোগদান করেন। ওই সময় শুধু প্রথম শ্রেণিতেই ৬৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। তখন স্কুলে সবমিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিকেরও বেশি নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে এবং নদীর ভাঙন স্কুলের কাছাকাছি চলে আসায় আমাদের স্কুলটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
জিয়াউর রহমান নামে ওই বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক বলেন, স্কুল থেকে মাত্র ৬০-৭০ ফুট দূরেই এখন বিষখালী নদীর অবস্থান। তাছাড়া বিষখালী নদীর তীরেই রয়েছে কালিকাবাড়ি গ্রাম ও বাজার । বিদ্যালয়টি একটি সাইক্লোন সেল্টারও বটে। প্রতিনিয়ত ভাঙনের ফলে স্কুলটি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে তেমনি গ্রাম ও বাজার। ইতিমধ্যে স্কুলের সামনের সড়কটি ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নদীর পার দিয়ে শিশুদের স্কুলে আসতে হচ্ছে। এছাড়া অতি জোয়ারের সময় স্কুলের মোঝেতে পর্যন্ত নদীর পানি চলে আসে। অনেক শিশুরাই তখন স্কুলে আসতে পারে না।
এছাড়া স্কুল ভবনটি ভোটকেন্দ্র এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সাইক্লোন শেল্টার হলেও ঘূর্ণিঝড়ের সময় এখানে কেউ আশ্রয় নিতে পারে না। ২০২৩ সালের পর থেকেই স্কুলের ঝুঁকির বিষয়টি ছবিসহ লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হলে তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করলেও কবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তা এলাকাবাসী জানেন না।
তবে বিদ্যালয়ের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর ছালেহ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়াও স্কুল থেকে তার কাছে একটি লিখিত আবেদনও দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী এলাকার একটি বিদ্যালয়,গ্রাম ও বাজরের অংশ বিষখালী নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। বিশেষ করে কালিকাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিদ্যালয়টি রক্ষায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং স্থানীয় জনগণের লিখত আবেদন তারা পেয়েছে। বিষয়টি আমাদের মহাপরিচালকের নজরেও আনা হয়েছে। কিছু কাজ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে নকশার কাজ চলমান আছে, নকশা পেলেই টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :